ওঝা- এই নামটি দিয়ে চেতনে/অবচেতনে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসকের ছবি ভেসে আসে। যারা সাহিত্য বা বিসিএসের প্রিপারেশন নিচ্ছেন তাদের কাছে “ওঝা” বলতে কৃত্তিবাস ওঝার নামটি ভেসে ওঠে। যদিও তাঁর আসল পদবি ছিল মুখোপাধ্যায়। কৃত্তিবাস ওঝা হলেন বাংলায় বাল্মিকীর রামায়ণের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ অনুবাদক।” শ্রীরাম পাঁচালী ” হল কৃত্তিবাস রচিত রামায়ণের নাম।
মূলত এই ওঝা নামটি এসেছে “ঊপাধ্যায়” হতে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে “ওঝা” হল “শিখল” “শ্রীমলী” “অত্রি” “সরস্বত” “ভূমিহর” “কন্যাক্যুজ” “মৈথিলী” “নেপালী” ব্রাহ্মণদের পদবি যারা বাংলাদেশ, ভারত নেপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন।
ব্রাহ্মণরা যেহেতু হিন্দু বর্ণব্যবস্থায় সমাজের উচ্চস্তরে আসীন ছিল, তাই আদি কাল থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও শিক্ষা চর্চায় ও তারা অগ্রগামী ছিলেন। তাই অনেকে মনে করে থাকেন যে উপাধ্যায় (শিক্ষক/অধ্যাপক/উপদেষ্টা) থেকে ওঝা শব্দটির উৎপত্তি।এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমানে হিন্দু সমাজে যে বর্ণব্যবস্থা আমরা দেখি তা হল আদি হিন্দু বর্ণ ব্যবস্থার বিকৃত রুপ। বর্তমানে ব্রাহ্মনের ছেলে ব্রাহ্মন, শুদ্রের ছেলে শুদ্র বলে পরিচিত হয়। কিন্ত আসলে আদি বর্ণব্যবস্থা কিন্ত “জন্মসুত্রে” পাওয়া কোন কিছু ছিলনা।
দুটো উদাহরণ দিচ্ছিঃ
আমরা সবাই রাবনের কথা জানি। সবাই তাঁকে রাক্ষস হিসেবেই চিনি। কিন্ত তিনি ছিলেন বিশ্রবা মুনির সন্তান । তাই জন্মসূত্রে রাবন কিন্ত ব্রাহ্মন। কিন্ত নিজ কর্মগুনের কারনে তিনি রাক্ষস হিসেবে পরিচিত হন।
ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাস বা অপরাধীর পুত্র কিন্তু তিনি পরিণত হন শীর্ষ ব্রাহ্মণদের মধ্যে একজন এবং লেখেন ঐতরেয়া ব্রাহ্মণ এবং ঐতরেয়াপোনিষদ
যাহোক, আমাদের আলোচ্য “ওঝা” শব্দটি দ্বারা পন্ডিত বা জ্ঞানী ব্যক্তিকেই বুঝানো হয়।
অন্যদিকে বনগরু একটি দেশী শব্দ যা দ্বারা বুনো মহিষ বা বুনো ষাঁড় কে বুঝানো হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এই বনগরু মূর্খশ্রেণীর প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।
প্রবাদের অর্থঃ ওঝার ব্যাটা বনগরু বলতে, কোন জ্ঞানী ব্যক্তির সন্তান যদি মূর্খ হয় তবে সমাজে তাকে বনগরুর সাথে তুলনা করা হয়। অতএব জ্ঞানী ব্যক্তির মূর্খ সন্তানকেই “ওঝার ব্যাটা বনগরু” হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তথ্যসূত্র
১। উইকিপিডিয়া
২।বাংলা ভাষা ও সাহিত্য – ড. সৌমিত্র শেখর
ওম প্রকাশ চৌধুরী
সহকারী পরিচালক
বাংলাদেশ ব্যাংক
ISM Cell
Nice
LikeLike