মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কন্যা জেবুন্নেসার কবি প্রতিভার ঘটনা নিয়ে মূলত আমার এই শেয়ার—
সম্রাট আওরঙ্গজেব, আলমগীর নামেই তিনি সমাধিক পরিচিত আর তার সহধর্মীনি সম্রাজ্ঞী দিলরাস বানু বেগমের কন্যা জেবুন্নেসা। সম্রাট আওরঙ্গজেব আদর করেই কন্যার নাম জেবুন্নেসা রেখেছিলেন যার অর্থ “ললনাশ্রী”।
জেবুন্নেসা বিদুষী ছিলেন, ছিলেন চিরকুমারী। তিনি তিন বছর বয়সে কোরান মুখস্থ করেছিলেন এবং ৭ (সাত) বছর বয়সে কোরানে হাফেজা হয়েছিলেন। এই খুশিতে সম্রাট আওরঙ্গজেব জেবুন্নেসা কে ৩০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা উপহারস্বরুপ প্রদান পূর্বক একদিন সরকারী ছুটি ও বিপুল ভোজের আয়োজন করেছিলন। হাফেজা হওয়ার পর তিনি আরবি, ফারসি আর উর্দু ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করেন ।
একবার পারস্যের বাদশা স্বপ্নের মধ্যে একটি কবিতার ছত্র মুখস্থ করেন–
“দুররে আবলাক কাসে কমদিদা মওজুদ”
যার অর্থ “সাদা-কালো মিশ্রিত রঙের মোতির প্রত্যক্ষদর্শী বিরল” ।
তিনি দেশের কবি সাহিত্যিকদের আহবান করলেন এর সাথে মিলিয়ে অনুরূপ আরেকটি ছত্র লেখার জন্য। কিন্ত কেউ এর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। দিল্লীর দরবারেও সেই ছত্রটি পাঠানো হল।
ছত্রটি পেয়ে দরবারের সবাই যখন ইতস্তত করছেন তখন সেটি অন্তঃপুরে জেবুন্নেসার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হল।
তিনি একটু চোখ বুলিয়েই ঐ বাক্যের নিচে আর একটি বাক্য লেখেন–
” মাগার আশকে বুতানে সুরমা আলুদ”
যার অর্থ “কিন্তু সুরমা পরা চোখের অশ্রুবিন্দুতে ঐ মোতির প্রাচুর্য”
পারস্যের বাদশাহ’র সামান্য একটি বাক্যে অসাধারন জ্ঞানবুদ্ধি বিজরিত উচ্চশ্রেণির ছন্দ সৃষ্টিতে ভারতের জ্ঞানগুণীরা তো মুগ্ধ হয়েছিলেন-ই পারস্যে যখন লেখাটি পৌছাল তারাও লেখিকাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করলেন আর পারস্যের জ্ঞানগুনীরাও সুলতান কে অনুরোধ করলেন এই বিখ্যাত নারীকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমন্ত্রন জানাতে।
পারস্যের বিখ্যাত কবির লিখিত কবিতার মাধ্যমে জেবুন্নেসাকে আমন্ত্রন জানানো হল–
” তুরা অ্যায় মেহজাবী বে পরদা দিদান আরজু দারাম_____”
বাংলায় যার অর্থ ছিল–
“হে চন্দ্রাপেক্ষা সুন্দরী, আমাদের ব্যবধান দূরীভূত হোক , পর্দার বাইরে আপনার দর্শনের আশা নিয়ে যেতে চাই”
পারস্যের সুলতানের জবাবে জেবুন্নেসা লিখলেন
” বুয়ে গুলদার বারগে গুল পুশিদাহ আম দর সৌখন বিনাদ মোরা …”
যার অর্থ
” পুষ্পের সুঘ্রানের মত পুষ্পেই আমি লুকিয়ে আছি। আমায় যে কেউ দেখতে চায়, সে দেখুক আমার-ই লেখায়”
তথ্যসূত্রঃ
১।উইকিপিডিয়া
২। সম্রাট আওরঙ্গজেবের ভিতর -বাহির — জয়নাল হোসেন