কিছু কিছু ব্যাপার থাকে যা পিতা মাতা হতে জেনেটিক্যালী সন্তানের মধ্যে প্রবাহিত হয়।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যেও তাঁর পিতৃদেবের এই খুঁতখুঁতে স্বভাবটি সঞ্চারিত হয়েছিল।
একটু উদাহরণ দিইঃ
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ (রবীন্দ্রনাথের পিতা) সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, পোশাক আশাকের সৌন্দর্যের ব্যপারে তাঁর ছিল সতর্ক দৃষ্টি। সব কিছু হতে হবে সুন্দর আর দৃষ্টিনন্দন। কোন নিমন্ত্রনে যেতে হলে বাড়ীর ছোট মেয়েদের চুল বাধার দায়িত্ব দিতেন বড় মেয়ে সৌদামিনী দেবীকে। তো সৌদামিনী দেবী তাঁর “পিতৃস্মৃতি”তে লিখেছেন
“কেমন চুল বাধা হইল এক একদিন তিনি তাহা নিজে দেখিতেন। তাঁহার পছন্দমতো না হইলে পুনর্বার খুলিয়া ভাল করিয়া বাঁধিতে হইত”
যেমন পিতা তাঁর তেমন পুত্র, এবার রবীন্দ্রনাথের একটু খুঁতখুঁতে স্বভাবের বর্ণনা করিঃ
রবীন্দ্রনাথ যখন-ই ট্রেন ভ্রমন করতেন, চলন্ত ট্রেনের অনবরত ঝাকুনিতে তাঁর লেখা সবসময় মনের মত সুন্দর হতনা তখন তাঁর বেশ মনখারাপ হত। তো একবার তিনি কানাডা যাবার সময়, কোলকাতা থেকে ট্রেনে বোম্বাই যাবার পথে নির্মলকুমারীকে একটি চিঠি দেন, কিন্ত পরের দিনই তিনি আবার নতুন চিঠিতে আগের চিঠির প্রসঙ্গে লিখেন “ কাল গাড়ি চলতে চলতে তোমাকে একখানা চিঠি লিখেছিলুম। কিন্ত সে এমন একটা নাড়া খাওয়া চিঠি , ভূমিকম্পে আগাগোড়া ফাটল-ধরা বাড়ির মতো। তাঁর অক্ষরগুলো অশোকস্তম্ভের প্রাচীন অক্ষরের মতো আকার ধরেছে, পড়িয়ে নিতে গেলে রাখাল বাড়ূজ্জের শরণ নিতে হয়। এইজন্যে সেই চিঠিখানার প্রত্যক্ষরীকরণে প্রবৃত্ত হতে হল”
*** রবীন্দ্রনাথ, নজরুল সর্বদা আমার নিকট দুর্বোধ্য ঠেকে, তাই আমি সযত্নে তাদের ফাকি দিয়াছি। তবে সাম্প্রতিক কালে মহাকবির রেলভ্রমন বিষয়ক একখানি পুস্তক পাঠ করিতেছি। তাই তাঁহার ভ্রমনের ব্যাপারে একটু আধটু জানিতে পারিতেছি। আর যাহা জানিতেছি তাহা কিঞ্চিত ঢোল পিটাইয়া সবাইকে জানান দিতেছি।
তথ্যসূত্রঃ রেলভ্রমণে রবীন্দ্রনাথঃ অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য