১৮৭৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চলেছেন হাওড়া স্টেশনের পথে পিতা দেবেন্দ্রনাথের সাথে, তারা হাওড়া স্টেশন থেকে বোলপুর যাবেন রেলে চড়ে।
রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ১১ বছর ৯ মাস, বাড়ন্ত বলিষ্ঠ শরীর, দেখতে সুশ্রী।পিতা দেবেন্দ্রনাথের তখন প্রায় ৫৬ কি ৫৭ বছর বয়স।
প্রথম রেলে চড়া নিয়ে বালক রবীর মনে ভীতি শঙ্কা মিশ্রিত বিষ্ময় কাজ করছিল কারন সদ্য রেলভ্রণ করে আসা ভাগ্নে সত্যপ্রসাদ তাঁকে বলেছিলেন
“ বিশেষ দক্ষতা না থাকিলে রেলগাড়িতে চড়া এক ভয়ংকর সংকট। পা ফসকাইয়া গেলেই আর রক্ষা নাই।তারপর, গাড়ি যখন চলিতে আরম্ভ করে তখন শরীরের সমস্ত শক্তিকে আশ্রয় করিয়া খুব জোর করিয়া বসা চাই, নহিলে এমন ভয়ংকর ধাক্কা দেয় যে মানুষ কে কোথায় ছিটকাইয়া পড়ে তাহার ঠিকানা পাওয়া যায়না”
এইসব ভীতিকর কথাবার্তা শুনে শংকিত চিত্তে বালক রবীন্দ্রনাথ তাঁর পিতার সাথে হাওড়া স্টেশনে উপস্থিত হলেন বোলপুরে যাবার জন্য।
বালক রবী ট্রেনে উঠলেন, ট্রেনের হুইসেল বাজল, তাঁর ভাষায়-ই শুনি
“ যখন অত্যন্ত সহজে গাড়ি ছাড়িয়া দিল তখন কোথাও বিপদের একটুও আভাষ না পাইয়া মনটা বিমর্ষ হইয়া গেল”
তারা সন্ধ্যার দিকে বোলপুরে পৌছলেন। বোলপুরে কিছুদিন কাটিয়েই পিতা পুত্র আবার রওনা হলেন উত্তর ভারতের পথে। ট্রেনটি বোলপুর থেকে সাহেবগঞ্জ, দানাপুর, এলাহাবাদ,কানপুর প্রভৃতি স্টেশনে অল্প অল্প থেমে চলতে লাগল। অবশেষে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তারা অমৃতসরে এসে পৌছলেন।
তাঁর এই যাত্রেপথের বিশেষ একটি ঘটনা তাঁর জীবনে স্মরণীয় হয়ে ছিল।
আগেই বলেছি, রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ১১ বছর ৯মাস। তখনকার সময়ে ট্রেনে ১২ বছরের নীচের বয়সীদের জন্য হাফ টিকেট কাটার সুযোগ ছিল।
পিতা দেবেন্দ্রনাথ তাঁর ছেলের জন্য হাফ টিকেট-ই কেটেছিলেন। কিন্ত গায়ে গতরে বাড়ন্ত বালক রবীকে দেখে বোঝার উপায় ছিলনা যে তাঁর আসল বয়স কত। তাঁকে আরো বেশী বয়সী বলেই মনে হত। এই কারনেই তাদের একটা বিশেষ স্মরণীয় ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল যা বালক রবীন্দ্রনাথের মনে দাগ কেটে গিয়েছিল।