দরবারে নিজ সিংহাসনে বসে আছেন মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর। যৌবনে তিনি যুবরাজ সেলিম হিসেবেই বেশী পরিচিত ছিলেন। যে সিংহাসনে তিনি বসে আছেন তাতে ১৫০ কোটি টাকার মণি মুক্তা, জহরত এবং ১৫ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণ লেগেছিল। সম্রাটের মস্তকের মুকুটটি ১২(দ্বাদশ) কোন বিশিষ্ট যার প্রতিটি কোনে ১৫লক্ষ টাকার এক একটি হীরকখন্ড বসানো এবং অন্যান্য অংশে আছে দুইশত চুনী যার প্রতিটির দাম তৎকালীন ছয়হাজার টাকা। সম্রাটের সামনে বঙ্গদেশের সাতজন বাজিকর উপস্থিত হয়েছেন তার মনোরঞ্জনের জন্য।
বাজিকরগণের কৌশলগুলো এতই অদ্ভূত ছিল যে সম্রাট জাহাঙ্গীর তার নিজ জীবনীতে তাদের দেখানো প্রায় ২৮টি কৌশল/যাদু উল্লেখ করে গেছেন।
আমি বাজিকরদের দেখানো প্রথম কৌশল/যাদুর ঘটনাটি এখানে শেয়ার করছি।
প্রথম যাদুঃ
বাজিকরগণ সম্রাট ও অন্যান্য সভাষদদের বললেন তারা মানুষের বুদ্ধির অগম্য আশ্চর্য্যজনক কাজ করতে সক্ষম, যেমন, যে কেউ যে বৃক্ষের নাম বলুক না কেন তারা সেই বৃক্ষের বীজ মাটিতে রোপণ করে তৎক্ষণাৎ সেই বৃক্ষ উৎপাদন করবে।
সম্রাট জাহাঙ্গীর এর সভাসদ খান-ই- জাহান তাদেরকে তুঁত গাছ উৎপাদন করতে বললেন। বাজিকরগণ সাথে সাথেই দশটি বিভিন্ন স্থানে বীজ রোপণ করে অবোধ্য ভাষায় মন্ত্র পড়তে লাগলেন। নিমেষের মধ্যেই দশটি স্থানে দশটি তুঁত বৃক্ষ দেখা দিল। এভাবে সভাষদদের আগ্রহে তারা আম, আপেল, সাইপ্রেস, আনারস, ডুমুর, বাদাম, আখরোট এবং অন্যান্য বহু বৃক্ষ উৎপন্ন করলো।
তারা এই কার্যগুলো সম্রাট আর সভাষদদের সম্মুখেই করেছিলেন।
সম্রাট দেখলেন গাছগুলো প্রথমত মাটি হতে উত্থিত হলো এবং এক দুইহাত লম্বা হবার পর বহু শাখাপ্রশাখা আর পত্রে শোভিত হলো।
এভাবে একটি আপেল বৃক্ষ হতে আপেল ফলানো হল আর তা সম্রাটকে নিবেদন করা হলো। সম্রাট পরীক্ষা করে দেখলেন যে তা স্বাদে আর সৌরভে স্বাভাবিক আপেলের ন্যায়। তারা অন্যান্য বৃক্ষ হতে ফল উৎপাদন করে তা সম্রাটকে আস্বাদন করতে দিল। সম্রাট আর সভাষদগণ সেই ফলগুলো আস্বাদন করেছিলেন। ফল উৎপন্ন হবার পর শাখার উপর নানা বর্ণের মনোহর পাখিদের আগমন ঘটল তাদের কলকাকলীতে সেই প্রাঙ্গণ মুখরিত হলো। সম্রাট ইতিমধ্যে অভিভূত হয়ে গেছেন।
কিছুক্ষণ পর গাছগুলোর পাতা শরৎকালীন বৃক্ষের ন্যায় রঙ ধারণ করলো আর ধীরে ধীরে মাটির সাথেই আবার গাছগুলো মিলিয়ে গেল।
মানুষযে এমন অদ্ভুত কাজ করতে পারে তা সম্রাট নিজের চোখে না দেখলে কখনো বিশ্বাস করতে পারতেননা…
আরো পড়ুন
১।সম্রাট আওরঙ্গজেবের উইল থেকে
২।আওরঙ্গজেব তনয়া জেবুন্নেসা