পর্ব-২ পড়তে ক্লিক করুন আগেই বলেছি, লেখালেখিতে হিকির বাড়াবাড়ি আর আক্রমনাত্বক কথাবার্তার কারনে ওয়ারেন হেস্টিংস ও খুজছিলেন হিকিকে শায়েস্তা করার রাস্তা। ১৭৮০ সালের নভেম্বরের ১৪ তারিখে গভর্ণমেন্ট নির্দেশ পাঠালেন জেনারেল পোস্ট অফিসে যাতে ঐ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া যায়।
হিকি তাঁর কাগজ বিলি করার জন্য ২০জন হকার রেখেছিলেন, তিনি তাদের ডেকে বললেন
“ যদি আমাকে কাগজ বন্ধ করে হোমারের মত ছোট ছোট গাথা লেখে রাস্তায় ফেরী করেও বেড়াতে হয়,তবুও আমি তা করব, কিন্ত গভর্ণমেন্টের বিরোধিতা করা ছাড়বনা”
তাঁর এই গোয়ার্তুমির ফল হল হাজতবাস।
১৭৮১ সালের দিকে হেস্টিংস তাঁর নামে দুটো মামলা রজু করলেন। তা থেকে হিকি কোন রকমে পাড় পেয়েছিলেন। কিন্ত পরের বছর মার্চের দিকে আদালতের হুকুমে তাঁর ছাপাখানা বাজেয়াপ্ত হল।
এই সময় অগাস্টাস হিকির ঘনিষ্ঠ ব্যারিস্টার উইলিয়াম হিকি চার বছরের জন্য কলকাতা ছেড়ে নিজ দেশে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরে আসার সাথে সাথেই জেলখানা থেকে হিকির চিঠি পেলেন “আমি জেলখানায় পচছি, দয়া করে একবার দেখা করুন আমার সাথে।“
ব্যারিস্টার উইলিয়াম হিকি দেখা করলেন জেলে অগাস্টাসের সাথে, দেখা হবার সাথে সাথেই অগাস্টাসের লক্ষাধিক অভিযোগ হেস্টিংস আর বিচারপতি এলিজা ইম্পের উপর। হিকির বক্তব্য, তারাই চক্রান্ত করে তাকে জেলখানায় পচাচ্ছে।
এর আগেও ব্যারিস্টার উইলিয়াম হিকি সাংবাদিক অগাস্টাস হিকিকে বাচিয়েছিলেন, কিন্ত এবার তাকে বাচানো কঠিন হয়ে পড়ল— কারনটা বলছিঃ
হিকিকে যখন বিচার করা হচ্ছিল সেখানে জুরিদের মধ্যে জন রাইডার নামে একজনকে দেখতে পেয়েই কাঠগড়াই দাঁড়িয়ে হিকির সেই তাণ্ডব নৃত্য,“ ও লোকটা জুরি হল কি করে? ও তো ইম্পে সাহেবের মোসাহেব। লোভী ইম্পের জামা-কাপড় কিনে বেড়ায় দোকানে ঘুরে ঘুরে “
বিচারকের আসনে বসে ইম্পের তখন লজ্জায় মরো মরো অবস্থা।
এই বদমেজাজী ও কলকাতার তথা বাংলার প্রথম সংবাদপত্রের জনক অগাস্টাস হিকি সম্পর্কে ব্যারিস্টার উইলিয়াম তাঁর মেমোয়ার্সে লিখেছিলেনঃ
“ আমি একজন খেয়ালি আর পাগলাটে ধরনের মানুষকে দেখলাম, যার প্রতিভা আছে কিন্তু তা অনুশীলন বা চর্চার দ্বারা মার্জিত নয়। তাঁর পাগলামির জন্যে আমি তাঁকে ডাকতাম ক্ষ্যাপাটে আইরিশম্যান বলে”
তথ্যসূত্র
১।উইকিপিডিয়া
২। কলকাতার প্রথমঃ পুর্নেন্দু পত্রী