মানুষের নিকটতম আত্মীয় হলো শিম্পাঞ্জী, তো একটি শিম্পাঞ্জীর বাচ্চাকে যদি মানুষের মত লালন পালন করা হয় তো কেমন হবে? সোভিয়েত পশু-মনোবিদ ন ন লাদিগিনা-কতস একটি পরীক্ষা করেছিলেন, তিনি ইয়োনি নামের একটি শিম্পাঞ্জীর বাচ্চাকে দেড় বছর বয়স থেকে চার বছর বয়স অবধি মানব শিশুর মত-ই করে লালন পালন করে তাঁর কার্যকলাপ বা পরিবর্তন ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি ইয়োনিকে মানবশিশুর মত করেই খেলনা, জিনিসপত্র আর সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দিবার পাশাপাশি জিনিসপত্র গুলো ব্যবহার শিখানো ও মুখের কথার দ্বারা সেগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপনের ব্যপারে চেষ্টা করেন।
কয়েক বছর পর লাগিদিনা-কতস এর নিজের একটি পুত্র সন্তান হয়। নিজ পুত্রের নাম তিনি রাখেন রুদলভ (রুদি)। রুদির ক্ষেত্রেও তিনি চার বছর বয়স পর্যন্ত তার মানসিক বিকাশের ধারা সযত্নে লক্ষ করেন। এই পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেল, শিম্পাঞ্জীটি মানুষের অনেক কাজ অনুকরণ করলেও মানুষের মত খাড়া হয়ে দাঁড়াতে শিখেনি, হাতুড়ি দিয়ে পেরেক ঠুকতে গেলে প্রোপারলি হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারা বা পেরেক ঠিক মতো ধরতে শিখেনি বা সামগ্রিক ব্যাপারটিকে ত্রুটিহীন করতে পারেনি, কাজের বাহ্যিক দিকটি সে ধরতে পারলেও মূল অর্থটি সে ধরতে পারেনি। যদিও তাকে এইসব ব্যপারগুলো শিখানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। সৃষ্টিশীল বা গঠনমূলক কাজ গুলো ইয়োনীর (শিম্পাঞ্জী) ধরা ছোয়ার বাইরেই থাকলো, আর মানুষের মত ধ্বনি, শব্দ নকল বা শব্দ আয়ত্ত্ব করার কোন সিম্পটম তার মধ্যে দেখা গেলনা।
গত শতকের শুরুর দিকে ভারতের এক গ্রামে দুটি অদ্ভুত মেয়েকে পাওয়া যায়, তারা হাঁটছিল চার হাতপায়ে ভর দিয়ে, কোথা থেকে এলো তারা? সন্ধান করে দেখা গেল তারা ছোট থেকে বড় হয়েছে এক নেকড়ে পরিবারের সাথে। নেকড়েদের সাথে থাকতে থাকতে তারা নেকড়েদের মতই চার হাত পায়ে হাঁটা শিখেছে। তো এই নেকড়ে মানবীদ্বয়কে লোকালয়ে নিয়ে আসা হলো যাতে তারা মানব পরিবেশে বড় হতে পারে। নাম দেওয়া হলো তাদের, বড়টির নাম (বয়স প্রায় আট বছর) কমলা, আর ছোটটির নাম অমলা (বয়স প্রায় দেড় বছর)। তো তারা কাউকে দেখা মাত্রই ভীতি প্রকাশ করে লুকোবার চেষ্টা করতো তারা, মানুষকে কামড়াতে যেত আর রাতে নেকড়ের মতো আওয়াজ করতো। ছোট মেয়ে অমলা বছর খানেকের মধ্যে মারা যায়। কমলা আরো কয়েক বছর বেঁচে ছিল। এর মধ্য সফলভাবে কমলার নেকড়ে সুলভ আচরণ ছাড়ানো গিয়েছিল।
কিন্তু তারপরো খুব দ্রুত কোথাও যেতে হলে সে চার হাত পায়ে চলতে চাইতো। সে অনর্গল কথা বলতে পারতোনা, অনেক কষ্টে তাকে চল্লিশটি শব্দ শিখানো গিয়েছিলো। ইয়োনি (শিম্পাঞ্জী) আর কমলার ঘটনা থেকে যা দেখা যায়, ইয়োনি বেড়ে উঠেছিল বানর (শিম্পাঞ্জী) হয়েই কিন্তু কমলা মানুষ হয়ে বেড়ে উঠেনি। ইয়োনি বড় হয়ে তার শিম্পঞ্জী মূলক সহজাত প্রবৃত্তি গুলো লাভ করেছিল আর কমলা বড় হতে হতে লাভ করেছিল নেকড়েসূলভ প্রবৃত্তি। এ থেকে বুঝা যায়, শিম্পঞ্জী বা বানর গোত্রীয় প্রাণীর মস্তিষ্কে তার বংশগতির ব্যাপার গুলো পূর্বনির্ধারিত থাকে অর্থাৎ বড় হয়ে সে কি কি গুণাবলী বিশিষ্ট হবে তা তার মস্তিষ্কে সেট করাই থাকে।
এ কারনে মানুষের মত বড় হয়েও সে মানুষের মত সৃষ্টিশীল কোন কাজ, কথা বা ধ্বনি নকল ইত্যাদি করতে পারেনি। মস্তিষ্ক যে ফুললি লোডেড, পারবে কেমনে? অন্যদিকে মানব শিশুর মস্তিষ্কে মানবিক গুণাবলী, মনুষ্যসুলভ আচরণ প্রভৃতি সেট করা থাকেনা, ফুললি খালি একটি মস্তিষ্ক সে নিয়ে আসে, সেই সাথে নিয়ে আসে কোনো কিছুকে আয়ত্ত করার সামর্থ্য (যেমনঃকমলা নেকড়ের মত ডাকতো, চলাফেরা করতো)। জীবন তাকে যে শিক্ষা দিবে তা গ্রহণ করতে এই শিশু মস্তিষ্ক সর্বদা প্রস্তুত থাকে। শিখবার এই সামর্থ্য-ই মানুষের মস্তিষ্ককে পশুর মস্তিষ্ক থেকে আলাদা করেছে। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকা এখন মানুষের জন্য আর খাটেনা কারন মানুষ শিখে গেছে কীভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবেশকে শুধরে নিতে হয়। এই হলাম আমরা —মানুষ