পাঁচালি কথন
November 20, 2016 8 Comments
আমার বাবা নিরাকার একেশ্বরবাদী, আর আমার ক্ষেত্রে ধর্ম ব্যাপারটা ধোয়াশায় ভরা– মনের যুক্তির অংশের কারণে। অনেক প্রশ্নের উদ্ভব হয় যা খুঁজে পাইনা। আমার মস্তিষ্ক ও এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করেনা। তবে প্রকৃতি নামক এই অপারেটিং সিস্টেমটি আমাকে সবসময় আকর্ষণ করে। মস্তিষ্ক নামক সুপার কম্পিউটারের সাথে এই অপারেটিং সিস্টেমের কোন কানেকশন আছে কিনা তা জনতে ইচ্ছে করে।
অর্ধাঙ্গীর সাথে কথা হচ্ছিল লক্ষ্মীর পাঁচালি নিয়ে, মা লক্ষ্মীর পাঁচালি বিশ্বাস সহকারে পড়লে নাকি ধন প্রাপ্তি হয়, সংশারে শান্তি আসে। কম সময়ে ধন আর শান্তি লাভের খুবই এট্রাক্টিভ একটা অফার, ভাবলাম একটু পড়েই দেখি কি আছে এতে।
অবন্তীনগরের প্রধান ধনেশ্বর রায়, কুবেরের সমান তার ধন, স্ত্রী আর সাত পুত্র নিয়ে তিনি সুখে-শান্তিতে দিনাতিপাত করেন। যথাসময়ে তিনি ইহলোক ত্যাগ করলে তার পুত্রবধূদের কূটকৌশলের কারণে সাত ভাই আলাদা হয়ে যায় আর সংসারে অশান্তি নেমে আসে আর ধনক্ষয় হয়। পুত্রবধূরা পরে তাদের শ্বাশুড়িকে ঘর থেকে বিতাড়িত করে।পথমধ্যে লক্ষ্মীদেবী সেই শাশুড়িকে দেখা দিয়ে তাকে ঘরে ফিরে গিয়ে বধূদের সাথে একসাথে তাঁর ব্রত পালন করতে উপদেশ দেন। যাইহোক, শ্বাশুড়ি পুনরায় বাড়ি ফিরে বউদের সাথে একসাথে ব্রত পালন করলেন আর সংশার পুরনায় ধনসম্পদে পরিপূর্ণ হলো আর শান্তিও ফিরে এলো—
ভালো লাগলো পড়ে, কিন্তু কিছু খটকা রয়েই গেল, যেমন–
পাঁচালির কোথাও বলা হয়নি ধনেশ্বর রায় নিজে লক্ষ্মী পূজো করতেন তাহলে কি দাঁড়ায়? সেই ভদ্রলোকের কন্ট্রোলিং পাওয়ার আর বুদ্ধি বেশ ভালই ছিল, যার কারণে তাঁর জীবদ্দশায় কেও অশান্তি সৃষ্টি করতে পারেনি আর ধনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়নি।
অর্থাৎ লক্ষ্মী কার বশীভূত হবে তা ফুললি ডিপেন্ড করেছে ধনেশ্বরের বুদ্ধি, চেষ্টা আর কৃতকর্মের উপর। ধনেশ্বরের স্ত্রীর সেই কন্ট্রোলিং পাওয়ার বা বুদ্ধি ছিলনা যার কারণে তাকে বিপদে পড়তে হয়েছে সেই সাথে পরিবারের ধনক্ষয় ও হয়েছে, অর্থাৎ ধনেশ্বরের ছেলেগুলো কতটুকু পিতার বুদ্ধিমত্তা আর কন্ট্রোলিং পাওয়ার জন্মসূত্রে ইনহেরিট করেছিল তা সন্দেহজনক।
যাইহোক, বিশ্বাস আর যুক্তি দুটি ভিন্ন ধারা, আমরা প্রার্থনা করি, কিন্তু কি প্রার্থনা করছি বা কি পড়ছি তাই বুঝিনা।
যে যাই বলুক, দেবী লক্ষ্মীর চেয়ে ধনেশ্বরের ব্যাপারটিই আমাকে আকৃষ্ট করেছে বেশী— ইন্টেলিজেন্স, পেশেন্স ,পাওয়ার আর ওয়েলথ— প্রকৃত পুরুষ হতে আর কি লাগে??